কারণ বরাত-এর রাত হচ্ছে সমস্ত জ্বিন
ও ইনসানের ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিলের মাধ্যম বা উসীলা।
তাই শবে বরাত-এর ফযীলত সম্পর্কে
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন
শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘যখন অর্ধ শা’বানের রাত্রি অর্থাৎ
শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে।’
যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার
ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, মুর্শিদে
আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৯৭ ভাগ লোক মুসলমান। তাই সরকারের উচিত ছিল ইসলামিক পর্বগুলোতে
ব্যাপক আকারে ছুটি প্রদান করা। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটাই হয়ে আসছে। ইসলামী জজবা
ও মুহব্বত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিজাতীয়, বেদ্বীনি ও কাফির-মুশরিকদের পর্বগুলোতে ব্যাপক
আকারে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে সরকারি ছুটি দেয়া হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ ইসলামি পর্বগুলোতে
ছুটি দেয়া হচ্ছে না। আর ছুটি দিলেও নামকাওয়াস্তে ছুটি দেয়া হচ্ছে।
আসন্ন শবে বরাত উপলক্ষে সরকারের
করনীয় সম্পর্কে নছীহত পেশকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট
নাইট, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা, শ্রমিক দিবস থেকে শুরু করে নানান বিজাতীয়
পর্ব তথা ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসকারী পর্বগুলোতে সরকারি ছুটি দেয়া হচ্ছে। অথচ
ইসলামী পর্ব যেমন- শবে মি’রাজ, পহেলা রজব, লাইলাতুর রগায়িব, ফাতিহা-ই ইয়াজ দাহম, হযরত
খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ-৬ই রজব থেকে শুরু করে তাবৎ ইসলামী এবং
মুসলমানদের ঈমান ও জজবা এবং মুহব্বত বৃদ্ধিকারী পর্বগুলোতে সরকারি ছুটি দেয়া হচ্ছে
না। আর ইসলামী কিছু পর্বের মধ্যে ছুটি দিলেও নামকাওয়াস্তে ছুটি দিচ্ছে সরকার। যেমন-
শবে বরাত। এই পবিত্র পর্ব উপলক্ষে মাত্র একদিন ছুটি দেয়া হয়। অথচ শবে বরাতের গুরুত্ব,
তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত বর্ণনাতীত। এটি একটি বিশেষ রজনী যেই রজনীতে সমস্ত প্রকার দোয়া
নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত দোয়া কবুলের পাঁচ রাত্রির মধ্যে এই বরাতের
রাত্র হচ্ছে অন্যতম গুরুত্ববহ। এই রাত্রিতেই সর্বপ্রকার প্রজ্ঞাময় বিষয়সমূহের ফায়সালা
করা হয়। প্রত্যেক মু’মিনীন-মুসলমানের জন্য এই রাত্রে ইবাদত-বন্দিগী করা, তওবা ইস্তিগফার
করা, শবে বরাত উপলক্ষে দিনে রোযা রাখা আবশ্যক। অর্থাৎ ইসলামে শবে বরাতের গুরুত্ব অত্যধিক।
তাই এই সম্মানিত, মুবারক রাত তথা শবে বরাত উপলক্ষে কমপক্ষে তিন দিন বাধ্যতামূলক সরকারি
ছুটি দেয়া জরুরী।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি
ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ
নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার নির্দেশে
আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়ছালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।”
(সূরা দুখান : আয়াত শরীফ ৩-৫) উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ শব্দ দ্বারা
‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ তথা অর্ধ শা’বানের রাত বা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে। সর্বজনমান্য
বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরগুলোসহ সকল তাফসীরসমূহে এ কথাই উল্লেখ আছে।
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ছিহাহ সিত্তাহর অন্যতম
হাদীছ শরীফ গ্রন্থ “ছহীহ ইবনে মাযাহ” শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত্রি অর্থাৎ
শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে।
কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন
অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, ‘কোনো ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি?
আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।’ ‘কোনো রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।’
‘কোনো মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।’ এভাবে ফজর বা ছুবহে
ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাযাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত
শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি শা’বান মাসের রোযা সম্পর্কে
হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, “যে ব্যক্তি শা’বান মাসে তিনটি রোযা রাখবে
মহান আল্লাহ পাক তিনি তার গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! যারা তিনটি রোযা
রাখবে তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা’বান অর্থাৎ এ বছরের জন্য ৬, ৭, ৮ ছানী-১৩৮০ শামসী সন, ৪,
৫, ৬ জুলাই-২০১২ ঈসায়ী সন, ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি বা বুধবার, ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার
ও ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার দিনে রোযা রাখতে পারে। আর যদি তিনটি রোযা রাখা সম্ভব
না হয় তবে অন্ততঃপক্ষে শবে বরাতের পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের দিনের রোযাটি রাখার
চেষ্টা করবে। কেননা, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “শা’বান মাসের পনের তারিখ যে রোযা রাখবে,
জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।” সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো- এ বছরের জন্য
আগামী ৭ই ছানী-১৩৮০ শামসী সন, ৫ই জুলাই-২০১২ ঈসায়ী সন, ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার
দিবাগত রাত অর্থাৎ লাইলাতুল জুমুয়া বা জুমুয়ার রাত-ই হচ্ছে পবিত্র ‘শবে বরাত’। আর দিনটি
হলো ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার । তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অত্যন্ত জওক্ব-শওক্ব
এবং মুহব্বত ও খুলুছিয়তের সাথে আসন্ন শবে বরাত পালন করা। মুসলমানরা যাতে ইতমিনানের
সাথে অফুরন্ত নিয়ামতের রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ পালন করতে পারে এবং পরের দিন রোযা রাখতে
পারে সেজন্য বাংলাদেশ সরকারসহ পৃথিবীর সকল মুসলিম অমুসলিম সরকারের উচিত পবিত্র শবে
বরাত উপলক্ষে কমপক্ষে তিন দিন অর্থাৎ ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা’বান ছুটি ঘোষণা করা এবং মুসলমানদের
শবে বরাত পালনে সর্বপ্রকার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা।
No comments:
Post a Comment